স্বদেশ ডেস্ক:
হাওর-নদীর জেলা সুনামগঞ্জ। জেলার বিনোদনপ্রিয়দের জন্য সরকারি-বেসরকারিভাবে এখনো গড়ে ওঠেনি কোনো আধুনিক পার্ক। তবে শহরতলির ধারারগাঁওয়ে রয়েছে জেলা প্রশাসনের ‘সুরমা ভেলী পার্ক’। এটি দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ঠিকাদারের দখলে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পুরো পার্কটিকে নদীভাঙন প্রতিরোধের জন্য জিও ব্যাগে বালি ভর্তির জন্য ব্যবহার করছে।
এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন পার্কে বেড়াতে যাওয়া লোকজন। জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, বিষয়টি তিনি দেখেছেন। পার্ক থেকে দ্রুত জিও বস্তা সরানোর ব্যবস্থা নেবেন।
পাউবোর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আতাউর রহমান খান লিমিটেডের দায়িত্বপ্রাপ্ত সুপারভাইজার মো. আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিয়েই তারা পার্কে জিও ব্যাগে বালি ভর্তির কাজ করছেন। আরও এক মাস পর তাদের কাজ শেষ হবে।
জানা যায়, ২০১৩ সালের ৫ জুলাই শহরতলির ধারারগাঁও গ্রামের কাছে সুরমা নদীর তীরে তিন একর জায়গায় সুরমা ভেলী পার্ক নির্মাণকাজ শুরু হয়। এ কাজ উদ্বোধন করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী। পার্কটি মানুষের সময় কাটানোর জন্য পুরোপুরি উপযোগী হয়নি। তবে গত কয়েক বছরে একটি গোল ঘর, শিশুদের জন্য কয়েকটি দোলনা, রাইডার, বসার বেঞ্চ ও দুটি বাথরুম তৈরি করা হয়েছে। শহরবাসী বিকাল বেলা নদীতীরে একটু বসা ও হাঁটার জন্য পার্কে যেত।
কিন্তু প্রায় এক বছর ধরে সরকারি পার্কটি রয়েছে বালিভর্তি জিও ব্যাগের দখলে। শহরতলির ইব্রাহিমপুর গ্রামে নদীভাঙন প্রতিরোধে হাজার হাজার জিও ব্যাগে বালি ভর্তি করা হচ্ছে এখানে। পার্কজুড়ে রয়েছে বালিভর্তি ব্যাগ ও বালির স্তূপ। শিশুদের দোলনা ও রাইডারগুলো জিও ব্যাগে অবরুদ্ধ দীর্ঘদিন ধরে। এতে সাধারণ মানুষের পার্কে যাওয়া কমে গেছে। যারা একবার গিয়ে পার্কে বালির ব্যাগ দেখছেন, তারা আর যাচ্ছেন না।
সুনামগঞ্জ শহরের নতুনপাড়ার দিলীপ দেবনাথ বলেন, ‘একদিন বিকালে ছেলেমেয়েদের নিয়ে সুরমা ভেলী পার্কে বেড়াতে গিয়েছিলাম। যদি আগে জানতাম পার্কজুড়ে জিও ব্যাগের দখলে, তা হলে যেতাম না। বালি ও ব্যাগের কারণে পার্কের কোনো পরিবেশ নেই সেখানে। ’
শহরের আরপিননগরের সামছুল ইসলাম বলেন, ‘পার্কে মানুষ সকাল-বিকাল ঘুরবে, খেলবে, হাঁটাহাঁটি করবে। শিশুদের নিয়ে অভিভাবকরা পার্কে যাবেন সময় কাটাতে। কিন্তু সুরমা ভেলী পার্ক এখন বালির বস্তার দখলে। দেখে মনে হয় পার্কটি অভিভাবকহীন। প্রায় এক বছর ধরে পার্কে বস্তায় বালি ভরার কাজ চলছে।’
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাবিবুর রহমান বলেন, ‘সদর উপজেলার ইব্রাহিমপুর গ্রামের নদীভাঙন প্রতিরোধে ভাঙনস্থলে ফেলার জন্য জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলাপ করেই পার্কে জিও ব্যাগে বালি ভরা হচ্ছে। আগামী মাস-দেড় মাসের মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যাবে।’
জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বললেন, ‘আমি নিজেও পার্কের অবস্থা দেখেছি। পানি উন্নয়ন বোর্ড পার্কে শত শত জিও ব্যাগ ফেলে রেখেছে। যার কারণে শিশুরা খেলাধুলা করতে পারে না। সকাল-বিকাল হাঁটাও যায় না। পার্কটি বর্তমানে বদ্ধ জায়গায় পরিণত হয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে দ্রুত জিও ব্যাগ অন্যত্র সরানোর অনুরোধ করা হয়েছে।’